Latest News

🌟 WEEKLY WRAP UP 🌟

পোল্যান্ডের ‘বাপু’: এক ভারতীয় মহারাজা যাঁকে আজও মনে রাখে একটি বিদেশি দেশ

Author : Supriyo Mukherjee

04 September 2025 08:55 AM

70

মানব ইতিহাসের এক বিভীষিকাময় অধ্যায় — দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এই যুদ্ধ ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ। অনুমান করা হয়, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৭০ থেকে ৮৫ মিলিয়ন মানুষ এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছিলেন।জার্মানি এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন — উভয়েরই পোল্যান্ডকে নিয়ে ছিল কৌশলগত আগ্রহ। তাই তারা একত্রে পরিকল্পনা করে পোল্যান্ডে আক্রমণ চালায়। ১৯৩৯ সালের ১লা সেপ্টেম্বর, জার্মানির শাসক হিটলার পোল্যান্ডের ওপর আক্রমণ চালান। সঙ্গে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। পোল্যান্ডে শুরু হয় ব্যাপক ধ্বংস — রেলপথ ও যোগাযোগব্যবস্থা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়, বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে শুরু হয় স্থলআক্রমণ। নিরস্ত্র, অসহায় মানুষদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। লক্ষ লক্ষ পোলিশ নাগরিককে সোভিয়েত ইউনিয়নের দূরবর্তী অঞ্চলে পাঠানো হয়, যেখানে তারা অনাহারে ও রোগে ধুঁকে ধুঁকে মারা যান। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে, পোলিশ সেনারা ৫০০ নারী ও ২০০ শিশুকে একটি জাহাজে তুলে দেন — যাতে তারা কোনো শান্তিপূর্ণ দেশে আশ্রয় পেতে পারে। সেনারা ক্যাপ্টেনকে বলেন, “যেকোনো দেশে নিয়ে যাও, যেখানে ওরা বাঁচতে পারে।” বিদায়ের সময় তাঁরা বলেন, “আমরা যদি বেঁচে থাকি, একদিন আবার দেখা হবে।”

কিন্তু সেই জাহাজ অনেক দেশ ঘুরেও কোথাও আশ্রয় পায়নি। ইরানও তাদের ফিরিয়ে দেয়। শেষমেশ তারা পৌঁছায় ভারতে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার মুম্বই বন্দরে নামার অনুমতি দেয়নি। ঠিক তখনই এগিয়ে আসেন গুজরাটের জামনগরের মহারাজা জাম সাহেব দিগ্বিজয় সিংহ। তিনি এই মানবিক সংকটে গভীরভাবে বিচলিত হন। নিজের উদ্যোগে জামনগরের কাছে একটি বন্দরে জাহাজটিকে নামার অনুমতি দেন। মহারাজা তাঁদের খাবার, আশ্রয়, চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় সমস্ত সাহায্য দেন। ২০০ শিশুর জন্য জামনগরের বালাচাদি আর্মি স্কুলে বিনামূল্যে পড়াশোনার সুযোগ করে দেন। তিনি তাঁদের নিজের মতো করে ধর্ম ও সংস্কৃতি পালনের স্বাধীনতাও দেন। বড়দিনের উৎসবে তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে তাঁদের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতেন। এই পোলিশ শরণার্থীরা প্রায় নয় বছর জামনগরে ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা ছিলেন একেবারে নিরাপদ। মহারাজার প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা থেকে তাঁরা তাঁকে ডাকতেন ‘বাপু’ বলে।

যুদ্ধ শেষে সবাই নিরাপদে নিজেদের দেশে ফিরে যান। তাঁদেরই এক শিশুর পরবর্তীকালে পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হন। আজও তাঁদের উত্তরসূরিরা ভারতে এসে মহারাজার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। পোল্যান্ডের বহু রাস্তায় মহারাজার নাম রয়েছে, সরকারের নানা প্রকল্পেও তাঁর স্মৃতি সংরক্ষিত। প্রতিবছর পোল্যান্ডের পত্রিকাগুলিতে মহারাজার স্মরণে লেখা প্রকাশিত হয়।

-সুপ্রিয় মুখার্জি

Copyright © 2024 The Views Express, All Rights Reserved. Developed by PRIGROW